বাংলাদেশে প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপর শুরু হয় ভর্তি যুদ্ধ। শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের সারকারি - বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলতে ভর্তি হন। ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন। এই পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন নিশ্চত করেন। অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক ব্যয় বা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তবে এর বিপরিতে অন্য একটি চিত্র দেখা যায় যে, অনেকেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন নিশ্চিত করতে পারেন না। তখন তারা হতাশায় ভুগেন। এমনকি অনেক কটু কথা শুনতে হয় তাদেরকে। যারা সরাকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন নিশ্চিত করতে পারেন না, তাদের নামের পাশে ব্যর্থতার ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এমন একটি কালচার তৈরি হয়েছে এবং জনগণ এই কালচারটি চর্চা করে আসছেন। প্রক্রিতপক্ষে এই চর্চা দেশের শিক্ষা ও উন্নতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর দিক। যদি পরিসংখ্যান এর দিকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। নিঃসন্দেহে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা আসন নিশ্চিত করতে পারেন তারা মেধাবী। কিন্তু সত্য হলেও দুঃখজনক যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদেরকে তুলনামূলক কম মেধাবী বলে ধারনা করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে শিক্ষার্থী বলতেও চান না অনেকে। দেশের শিক্ষা ও জাতির উন্নয়ন যদি করতেই হয়, তাহলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করে তা করা কি সম্ভব? ২০২৩-২০২৪ সেশনের ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান দেখা যাকঃ-
বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন ২০২৩ সালের ভর্তি সংখ্যা
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ) প্রায় ৫৬,৩০০ জন
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৩,৫০০ জন
BUTEX (বস্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়) ৫২০ জন
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১,৪৯,০০০ জন
বিঃদ্রঃ ছকে উল্লেখিত সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে।
দেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেমন অত্যন্ত মেধাবী ও সফল ব্যাক্তিগণ বের হন, তেমনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও দেশের মেধাবী ও সফল ব্যাক্তিগন বের হতে হবে। শুধুমাত্র সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করলেই সফল হওয়া যাবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করলে সফল হওয়া যাবে না আথবা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের শিক্ষার্থী বলে গন্য করা হবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের শিক্ষার্থী বলে গন্য করা হবে না এমন চিন্তা-ভাবনা দেশের তরুন-তরুনিদের স্বপ্ন দেখার পরিসরকে ছোট করে আনছে। যা দেশ ও জাতির উন্নয়নের অন্তরায়। তাই, একজন শিক্ষার্থী নিজেকে মেধাবী ও সফল প্রমান করতে হলে তাকে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যয়ন করতে হবে, অন্যথায় সে কোন শিক্ষার্থী না এমন চিন্ত-ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ, সমতা নিশ্চিতকরণ এবং দেশ ও জাতির উন্নয়ন সাধনে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্য এবং গুণগত মান রক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
Comments
Post a Comment